অনলাইন ডেস্কঃ এ বছর করোনার সংক্রমণ তেমন না থাকায় ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বেড়েছে। ভোগান্তি এড়াতে ঈদের ছুটির আগেই ঢাকা ছাড়ছেন সাধারণ মানুষ। দূরপাল্লার বাস স্ট্যান্ড, ট্রেন ও লঞ্চঘাটে মানুষের চাপ বাড়ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রেল স্টেশন, ফেরিঘাট ও বাস টার্মিনালগুলোয় মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফেরা মানুষজন ভিড় করছেন বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে। অন্যদিকে কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনেও মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। এছাড়া সদর ঘাট লঞ্চ টার্মিনালে তেমন ভিড় না দেখা গেলেও দুপুরের পর থেকে মানুষের চাপ বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।সকালে রাজধানীর কল্যাণপুর ও গাবতলি বাস টার্মিনালে গিয়ে ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা যায়। এ সময় কথা হয় শারমিন আক্তার নামের এক গৃহিণীর সঙ্গে। তিনি জানান, বিগত দুই বছর করোনার জন্য তিনি বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে পারেননি। তাই এবার একটু আগে ভাগেই সন্তানদের নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। স্বামী চাকরিজীবী হওয়ায় তিনি পরে যাবেন।
তিনি বলেন, আমি বগুড়া যাচ্ছি পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে। বিগত দুই বছর করোনার জন্য বাড়িতে ঈদ করতে পারিনি। এ বছর যাচ্ছি। বেশ আনন্দ লাগছে। আসলে বছরের দুইটা ঈদ পরিবারের সবার সঙ্গে না করতে পারলে ভালো লাগে না।
এ সময় আরও কথা হয় কল্যাণপুরের শ্যামলী বাস কাউন্টারে টিকিট কাটতে আসা রংপুরগামী শাহরিয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি টিকিট কাটতে এসেছিলেন কল্যাণপুর বাস কাউন্টারে। শাহরিয়ার বলেন, আগে ৬০০ টাকা ভাড়া ছিল। এখন ৭০০ টাকা করে রাখা হচ্ছে। সরকারের এসব দিকে তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন।
ঈদে ভাড়া কেনো বাড়ানো হয় এ বিষয়ে বাস কাউন্টারের কর্মীরা জানান, ঈদের সময়ে রাজধানী থেকে যাত্রীবাহী বাস গেলেও আসার সময় ফাঁকা আসতে হয়। মূলত ঈদের সময়ে ওয়ান সাইড ব্যবসা হয়। এপাশ থেকে ৩০-৩২ জন যাত্রী যাচ্ছেন, ওইপাশ থেকে খালি গাড়ি আসছে। অন্য সময়ে এদিক থেকে ৩০ জন গেলে ওইদিক থেকে ৩০ জন আসে। তাই বাধ্য হয়েই টিকিটের মূল্য বেশি রাখা হয়।
এদিকে ঈদযাত্রায় প্রতিবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে রেলপথে। বুধবার ছিল ট্রেনে ঈদযাত্রার প্রথম দিন। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিন সকালেও রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উদ্দেশ্যে ট্রেন ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। প্রথম দিন ট্রেন ছাড়ায় বিলম্ব হওয়ার বিষয়ে ঈদযাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও আজ তেমনটি দেখা যায়নি। অনেকেই সেহরি করেই চলে এসেছেন স্টেশনে। তারা জানান, অনেক কষ্টে ট্রেনের টিকিট জুটেছে ভাগ্যে। এই ট্রেন কোনভাবেই মিস করা যাবে না। তাই হাতে যথেষ্ট সময় থাকলেও আগে ভাগেই চলে এসেছি যাতে কোনো ভাবেই ট্রেন মিস না হয়।
এবারের ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ৫৩ হাজার যাত্রী ট্রেনে রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন বলে জানা গেছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র আন্তঃনগর ট্রেনে আসন থাকবে ২৭ হাজারের বেশি।
এদিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। সকালে এখানে তেমন ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি। বৃহস্পতিবার সকালে সদরঘাট টার্মিনাল থেকে নির্ধারিত সময়েই ছেড়ে গেছে দক্ষিণ জনপদের বিভিন্ন রুটের লঞ্চ। বরিশাল ও চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি লঞ্চে ছিল যাত্রীচাপ। উপচে পড়া ভিড়ে খালি ছিল না লঞ্চের ছাদও। সংশ্লিষ্টরা জানান, দুপুরের পর থেকে মানুষের চাপ আরও বাড়তে শুরু করবে।
এছাড়া ইত্তেফাকের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ঈদকে সামনে রেখে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়াঘাটে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। ঈদযাত্রায় ফেরিতে ভোগান্তি এড়াতে আগেভাগেই এ নৌরুট হয়ে গ্ৰামের বাড়ির পথে ছুটছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী ঘরমুখো মানুষ। এছাড়া শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি নৌ-রুটে পারাপারের অপেক্ষায় ঘাটে শত শত গাড়ির উপস্থিতি দেখা যায়। তবে যানবাহন পারাপারে নৌরুটে ২টি মিনি রোরো, ২টি কে টাইপ ও ২টি ডাম্পসহ মাত্র ৮টি ফেরি সচল থাকলেও বেগম রোকিয়া নামের একটি ফেরি বিকল হয়ে যাওয়ায় মেরামতের জন্য ওয়ার্কশপে পাঠানো হয়েছে। তবে আজ আরেকটি ফেরি যুক্ত হবে বলে বিআইডব্লিউটিসি জানিয়েছে। এদিকে এ রুটে শুক্রবার থেকে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ফেরি চলাচল করবে।
বিপুল সংখ্যক যানবাহনের বিপরীতে ফেরির অপ্রতুলতায় পারপারে বেশি সময় লাগছে। এতে ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে রোগী ও শিশুরা পড়েছেন বেশি বিপাকে। তবে এ বছর ভারী যানবাহন এ নৌরুটে পার হচ্ছে না। এদিকে লঞ্চে ও স্পিডবোটেও যাত্রী পারাপার হচ্ছে। ফেরির পাশাপাশি এ নৌরুটে ৮৩টি লঞ্চ ও ১৫৩ স্পিডবোট সচল রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ। সূত্রঃ ইত্তেফাক