অনলাইন ডেস্কঃ খাদ্যের দাম এখন রেকর্ড উচ্চতায়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা প্রণীত বৈশ্বিক খাদ্য সূচক প্রতি মাসেই নতুন উচ্চতায় উঠছে। মূলত ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরু হওয়ার পর খাদ্যের দাম কেবল বাড়ছেই। এবার বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেছেন, খাদ্যসংকটের কারণে মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে।
ডেভিড ম্যালপাসের ভবিষ্যদ্বাণী, খাদ্যের এই উচ্চমূল্যের কারণে লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের কবলে পড়তে পারে। সেই সঙ্গে কমবে পুষ্টির মান। বিশ্বব্যাংকের হিসাব, খাদ্যের দাম ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এতে গরিব মানুষ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এঁরা যেমন একদিকে খাদ্য ব্যয় কমাবেন, অন্যদিকে বেশি দামে খাদ্য কিনতে গিয়ে পড়াশোনার পেছনে তাঁদের ব্যয় কমে যাবে।
বিবিসির অর্থনৈতিক সম্পাদক ফয়সাল ইসলামের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ডেভিড ম্যালপাস বলেছেন, গরিবদের ওপর খাদ্য ব্যয় বৃদ্ধির এই প্রভাবের কারণে এই সংকটও একধরনের অন্যায্য রূপ নেবে, কোভিড–১৯ যেমন নিয়েছে।
ম্যালপাস আরও বলেন, ‘এটা মানবিক বিপর্যয়, পুষ্টির মান পড়ে যাবে। আবার যেসব দেশের সরকার এ বিষয়ে কিছু করতে পারবে না, তাদের জন্য বিষয়টি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এ জন্য তারা দায়ী নয়, কিন্তু আঁচ তাদের গায়েও লাগে।’
এবারের এই খাদ্যসংকট বহুমুখী। সব ধরনের খাদ্যের ওপর এর প্রভাব পড়ছে—ভোজ্যতেল, শস্য থেকে শুরু করে কিছুই বাদ পড়ছে না। তবে গমের সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলেই মনে করছে বিশ্বব্যাংক। এর কারণ সম্পর্কে নতুন কিছু বলার অবকাশ নেই, ইউক্রেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ গম রপ্তানিকারক দেশ। এবার যখন গমবীজ বোনার সময় এল, তখনই শুরু হলো যুদ্ধ। বৈশ্বিক রুটির ভান্ডার হিসেবে পরিচিত ইউক্রেনে এবার বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি থেকে যাবে।
তবে যুদ্ধের আগেও বৈশ্বিক খাদ্য মজুত পর্যাপ্ত ছিল বলে জানিয়েছেন ম্যালপাস। কিন্তু বিক্রয় প্রক্রিয়ায় সমন্বয় দরকার বলে মনে করেন তিনি, কারণ, যখন যেখানে চাল প্রয়োজন, সেখানে তা সরবরাহ করা না গেলে বিপদ।
একই সঙ্গে সংকট এড়াতে ডেভিড ম্যালপাস খাদ্য উৎপাদনে ভর্তুকি ও মূল্য বেঁধে দেওয়ার নীতি গ্রহণে নিরুৎসাহিত করেছেন। বরং তাঁর পরামর্শ, বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও সারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। এর সঙ্গে দরিদ্রতম মানুষদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন তিনি।
এদিকে এক সংকটের মধ্যে আরেক সংকট মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্বব্যাংক প্রধান। মহামারির সময় অনেক দেশের সরকার মানুষকে প্রণোদনা দিতে বিপুল পরিমাণে ঋণ নিয়েছেন। এখন যেভাবে জ্বালানি ও খাদ্যমূল্য বাড়ছে, তাতে অনেক দেশের পক্ষে ঋণ পরিশোধ করা দুরূহ হয়ে উঠতে পারে।
তবে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের যৌথ বৈঠকে ধনী দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বলেছে, ঋণ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিস্ময়, এই ঋণ কি মওকুফ করে দেওয়া হবে? এদিকে এ নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠী সোচ্চার হয়ে উঠলেও ধনী দেশগুলো চুপচাপ আছে। সূত্রঃ প্রথম আলো